আপনি কি কখনো এমন একটি গল্প শুনেছেন যা শুধুমাত্র কল্পনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না? এমন একটি ঘটনা, যা সত্য আর মিথ্যার সীমারেখায় দাঁড়িয়ে রহস্যের ধোঁয়ায় মোড়া? আজকের গল্পটি ঠিক তেমনই—একটি ভৌতিক, বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা, যা আজও চীনের নাগরিকদের মনে কাঁপন ধরিয়ে দেয়।
গল্পটি ১৯৯৫ সালের বেইজিং শহরের, যেখানে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ৩৭৫ নম্বর একটি বাসের সঙ্গে। এই বাসটি আজও "Ghost Bus of Beijing" নামে পরিচিত।
🟥 অধ্যায় ১: এক ঠান্ডা রাতে শুরু
ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৫ সালের এক হিমশীতল রাতে। তখন শীত পড়েছে পুরোদমে। বেইজিং শহরের রাস্তাগুলো রাতের দিকে বেশ ফাঁকা হয়ে পড়ে, আর সেই রাতও তার ব্যতিক্রম ছিল না। বাতাসে ঠান্ডার কামড়, গায়ে লেগে থাকা একটা অদ্ভুত অনুভূতি। সময় তখন প্রায় রাত ১০টা ৪০ মিনিট।
ইউয়ানমিংইউয়ান বাস স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ৩৭৫ নম্বর বাসটি, যার গন্তব্য ছিল সিয়ানশান, শহরের একদম প্রান্তে অবস্থিত। বাসটিতে খুব বেশি যাত্রী ছিল না—একজন তরুণ, এক বৃদ্ধ দম্পতি, এবং এক মহিলা কন্ডাক্টর। সবই ছিল সাধারণ, যেন আর দশটা দিনের মতোই।
কিন্তু রাত যত গভীর হচ্ছিল, চারপাশের পরিবেশ ততই বদলে যাচ্ছিল। রাস্তাঘাট আরও ফাঁকা, বাতাস আরও ভারী, আর সেই সাথে যেন একটা অদৃশ্য ছায়া নেমে আসছিল।
🟧 অধ্যায় ২: অদ্ভুত তিন যাত্রীর আগমন
বাসটি কয়েকটি স্টপ অতিক্রম করার পর হঠাৎ একটি নির্জন ও অন্ধকার জায়গায় থামে। আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই, কোনো আলো নেই—স্রেফ অন্ধকার। এমন সময় বাসে ওঠে তিনজন অদ্ভুত মানুষ।
তাদের চেহারায় ছিল ফ্যাকাশে রঙ, চোখ যেন প্রাণহীন। পরনে ছিল প্রাচীন মাঞ্চু সাম্রাজ্যের যুগের পোশাক, যা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না তারা কোন যুগের মানুষ। সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয়—তারা বাসে উঠলেও কোনো পায়ের শব্দ হয়নি! যেন মাটিতে হেঁটে নয়, ভেসে ভেসেই উঠে এসেছে।
বাকিরা একে অপরের দিকে তাকাল। বাতাস ভারী হয়ে উঠল, কন্ডাক্টর টিকিট চাইলে তারা কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল। মনে হচ্ছিল, সময় থমকে গেছে।
🟨 অধ্যায় ৩: হঠাৎ নাটকীয় মোড়
কিছু সময় পর সেই বৃদ্ধ দম্পতি তরুণটির দিকে এগিয়ে আসে। তাঁরা নিচু স্বরে বলেন,
“তুমি আমাদের সঙ্গে একটু বাইরে নামবে? জরুরি কথা আছে।”
তরুণটি অবাক হলেও উঠে দাঁড়ায়। ঠিক তখনই বৃদ্ধা আচমকা চিৎকার করে উঠলেন,
“তুমি আমার মানিব্যাগ চুরি করেছ!”
এই হঠাৎ নাটকীয়তা দেখে কন্ডাক্টর ছুটে এল, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল। তরুণটি হতভম্ব, বলছে সে কিছুই নেয়নি। শেষমেশ বাধ্য হয়ে কন্ডাক্টর তিনজনকেই পরের স্টপে নামিয়ে দেয়।
🟩 অধ্যায় ৪: উন্মোচিত হয় গা ছমছমে সত্য
বাস থেকে নেমেই বৃদ্ধ দম্পতি তরুণটির দিকে ফিরে বলেন,
“তুমি চোর নও। কিন্তু আমাদের এই অভিনয় না করলে তুমি বাঁচতে না।”
তরুণটি তখনও কিছুই বুঝতে পারছে না। তারা বলেন,
“তারা মানুষ ছিল না... তারা ছিল ভূত!”
তাদের শরীর ছিল প্রাণহীন, ছায়ার মতো। তারা বাস্তবের কোনো অস্তিত্ব নয়, বরং মৃত্যুর প্রতিনিধি।
তরুণ তখন বুঝতে পারে, তার জীবন রক্ষা পেয়েছে এক নাটকীয় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না এই গল্প, কিন্তু তার কাছে এটি জীবনের সবচেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা।
🟦 অধ্যায় ৫: বাসটির শেষ যাত্রা
পরদিন সকালে পুলিশের কাছে খবর আসে—৩৭৫ নম্বর বাসটি গন্তব্যে পৌঁছায়নি। অনুসন্ধান শুরু হয়। অবশেষে বাসটি পাওয়া যায় শহরের এক প্রান্তের জলাশয়ের ধারে—সম্পূর্ণ পোড়া অবস্থায়।
বাসের ইঞ্জিন ছিল অক্ষত, কিন্তু কাঠামো ছিল ছাই হয়ে যাওয়া। আরও ভয়ের বিষয়—মিলেছিল কেবল কন্ডাক্টরের পোড়া দেহ।
আর সেই তিন অদ্ভুত যাত্রীর? কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি!
এই ঘটনার পর চীনের সরকার সেই রুটে রাতের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। ৩৭৫ নম্বর বাস হয়ে যায় একটি কিংবদন্তি, একটি বিভীষিকার প্রতীক।
🔻 উপসংহার: গল্প নাকি সত্য?
অনেকে বলেন, এটি নিছকই একটি শহুরে মিথ—একটি Urban Legend। কেউ বলেন, এই ঘটনা সত্যি, কিন্তু সরকার সেটিকে চেপে গেছে যাতে গুজব না ছড়ায়। আবার কেউ বলেন, এটি ভূতের গল্প নয়, বরং একটি নিখুঁত সাজানো নাটক।
কিন্তু সত্যিটা কী?
সেটি আজও অজানা।
হয়তো কোনোদিনই জানা যাবে না...
আপনি কি বিশ্বাস করেন এই ঘটনা সত্য ছিল? না কি এটি শুধুই একটি গা ছমছমে গল্প? আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না নিচে কমেন্টে।
চান কি এই ধরনের আরও রহস্যময় গল্প? তাহলে আমাদের ব্লগটি সাবস্ক্রাইব করুন এবং ফেসবুক পেজে জয়েন করুন—নতুন রহস্যের জগতে নিয়মিত প্রবেশ করার জন্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন