🌌 কোথায় আছে Voyager 1 এবং 2? | ২০২৫ সালের NASA আপডেট ও মহাজাগতিক রহস্য

১৯৭৭ সাল—মানব ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় বছর। কারণ সেই বছর দুটি মহাজাগতিক বার্তাবাহক—ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২—পৃথিবী ত্যাগ করেছিলেন। দুটি রোবোটিক মহাকাশযান, যাদের মূল লক্ষ্য ছিল আমাদের সৌরজগতের বাইরের রহস্য উন্মোচন করা। আজ, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে, প্রশ্ন জাগে—এত বছর পরেও তারা কোথায়? তারা কী করছে? তারা কি এখনও পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে সক্ষম?

আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের দুই দূরবর্তী অভিযাত্রী আজ এই রহস্যময় যাত্রায় কোথায় আছেন।

🚀 ভয়েজার ১: মানবজাতির সবচেয়ে দূরবর্তী দূত

ভয়েজার ১ এখন আমাদের সৌরজগতের একেবারে প্রান্ত পেরিয়ে, হেলিওপজ নামক একটি অঞ্চল পেরিয়ে গেছে। এটি এখন আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে ভ্রমণ করছে — যেখানে সূর্যের কণাগুলি মূলত প্রভাবিত হয় না।

২০২৫ সালের আপডেট অনুসারে, ভয়েজার ১ পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে। কল্পনা করুন, এত দূর থেকে পৃথিবীতে একটি সংকেত পৌঁছাতে ২২ ঘন্টারও বেশি সময় লাগে! এত দীর্ঘ ভ্রমণের পরেও এটি পৃথিবীতে তথ্য পাঠাচ্ছে এটা একটা বিরাট আশ্চর্যের বিষয়।

যাইহোক, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভয়েজার ১-এরও কিছু সমস্যা হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে, এটি হঠাৎ করে কিছু অদ্ভুত এবং ভুল তথ্য ফেরত পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়েননি। একটি জটিল সংকেত-ডিকোডিং কৌশল ব্যবহার করে, ২০২৪ সালে তারা ডেটা ফর্ম্যাট ঠিক করতে সক্ষম হন এবং এটি আবার সঠিক তথ্য পেতে শুরু করে।

🛰️ ভয়েজার ২: তুলনামূলকভাবে শান্ত কিন্তু নির্ভরযোগ্য

ভয়েজার ২, তার যমজ গ্রহের চেয়ে সামান্য ভিন্ন পথে, একমাত্র মহাকাশযান যা ইউরেনাস এবং নেপচুনের পাশ দিয়ে উড়ে যায় এবং সেই গ্রহগুলি থেকে সরাসরি ছবি এবং তথ্য ফেরত দেয়।

২০২৫ সালের হিসাবে, ভয়েজার ২ এখন পৃথিবী থেকে ২০ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে এবং ধীরে ধীরে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে প্রবেশ করছে। যদিও ২০২৩ সালে এর অ্যান্টেনা দুর্ঘটনাক্রমে পৃথিবী থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তবুও ২০২৪ সালে নাসা দক্ষতার সাথে এটিকে পুনঃস্থাপন করেছিল। এটি এখন আগের মতোই সংকেত পাঠাচ্ছে।

🎧 গোল্ডেন রেকর্ড: মহাবিশ্বের প্রতি একটি বার্তা

ভয়েজার ১ এবং ২ "গোল্ডেন রেকর্ড" বহন করেছিল - একটি সোনালী ডিস্ক যেখানে পৃথিবীর ভাষা, সঙ্গীত, শিশুদের হাসি, পাখির ডাক, এমনকি ৫৫টি ভাষায় শুভেচ্ছার রেকর্ডিং রয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছিল যাতে ভিনগ্রহীরা যদি কখনও এটি খুঁজে পায়, তারা বুঝতে পারে আমরা কে।

এই রেকর্ডটি মানবতার এক ধরণের "টাইম ক্যাপসুল" - যোগাযোগের একটি সম্ভাব্য প্রথম প্রচেষ্টা।

🛰️ নাসা এখনও কীভাবে যোগাযোগ রাখছে?

প্রশ্ন উঠতে পারে - নাসা এখনও এত দূরে দুটি যন্ত্রের সাথে কীভাবে যোগাযোগ বজায় রাখে? উত্তর হল: ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক (DSN)। এটি এমন একটি সিস্টেম যা বিশ্বের তিনটি ভিন্ন অংশে অবস্থিত বিশাল রেডিও অ্যান্টেনা দ্বারা পরিচালিত হয় - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন এবং অস্ট্রেলিয়ায়। এই নেটওয়ার্কটি এতটাই সংবেদনশীল যে এটি ভয়েজার থেকে আসা সংকেতের মতো কয়েকটি ওয়াটের মতো ছোট সংকেতও গ্রহণ করতে পারে।

নাসা সপ্তাহে একবার এই দুটি মহাকাশযানে সংকেত পাঠায় এবং তাদের কাছ থেকে টেলিমেট্রি ডেটা সংগ্রহ করে।

🔮 ভবিষ্যতের গোপন তথ্য

নাসার অনুমান অনুসারে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ভয়েজার ১ এবং ২ সম্পূর্ণরূপে বিদ্যুৎহীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ, তারা আর তাদের কোনও যন্ত্র পরিচালনা করতে পারবে না - কোনও তথ্য পাঠাতে পারবে না, যোগাযোগও বজায় রাখতে পারবে না।

কিন্তু তারা চলতে থাকবে। অন্তত পরবর্তী বিলিয়ন বছর ধরে, তারা একা, নীরবে মহাকাশে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী থাকবে।

🌌 ভয়েজারের প্রভাব

ভয়েজার ১ এবং ২ কেবল বিজ্ঞানকেই নয়, মানুষের কল্পনাকেও স্পর্শ করেছে। তাদের মাধ্যমে, আমরা শিখেছি যে সৌরজগতের বাইরেও আমাদের গল্প রয়েছে, যেখানে আলো নেই, কল্পনাও নেই। যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, কিন্তু মানবসৃষ্ট মেশিনগুলি পৌঁছায়।

 তাদের দীর্ঘ যাত্রা আমাদের একটা কথাই বলে - মানবজাতি কখনও থেমে থাকে না, তারা জানতে চায়, অজানাকে স্পর্শ করতে চায়।

🔔 উপসংহার

ভয়েজার ১ এবং ২ আজও শক্তিশালীভাবে এগিয়ে চলেছে, ঠিক যেমনটি তারা ৪৭ বছর আগে শুরু করেছিল। আরও কয়েক বছর পরে তারা চিরতরে নীরব থাকতে পারে, কিন্তু তাদের গল্প, তাদের বার্তা এবং তাদের অর্জন আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

এই ধরণের আরও আশ্চর্যজনক বিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্পের জন্য, রহস্য গ্রহ তে চোখ রাখুন।