যার জন্ম ভারতের এক ছোট শহরে হলেও, স্বপ্ন ছিল আকাশের গায়ে নাম লেখানোর।
শৈশব: স্বপ্নের বীজ রোপণ
📍 জন্ম: ১৭ মার্চ ১৯৬২, করনাল, হরিয়ানা
👨👩👧 পিতা-মাতা: বানারসি লাল চাওলা ও সঞ্জো চাওলা
ছোটবেলায় আকাশে উড়ন্ত বিমান দেখে কল্পনার মনে প্রশ্ন জাগত—"আমি কবে ওড়ব?" সেই সময়ের সমাজে মেয়েদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছিল অবাস্তব এক কল্পনা। কিন্তু কল্পনা ছিলেন ব্যতিক্রম।
পড়াশোনা ও সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই
🎓 স্কুল: ট্যাগোর বাল নিকেতন, করনাল
🎓 কলেজ: পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (এয়ারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)
পরিবার চেয়েছিল তিনি ডাক্তার বা শিক্ষক হোন। কিন্তু কল্পনা বেছে নিলেন ভিন্ন পথ। সেই সময় ভারতে মেয়েদের পাইলট বা মহাকাশচারী হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ ছিল না। তবুও তিনি পিছু হটেননি। স্নাতক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পথে পা বাড়ান।
আমেরিকায় যাত্রা ও নাসায় প্রথম পদচারণা
🎓 মাস্টার্স ও পিএইচডি: টেক্সাস ইউনিভার্সিটি, এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং
🛰 নাসায় যোগদান: গবেষক হিসেবে শুরু, ১৯৯4 সালে মহাকাশচারী নির্বাচিত
এটি ছিল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত—ভারতের মেয়ে এবার মহাকাশে যেতে চলেছেন!
প্রথম মহাকাশযাত্রা: STS-87 (১৯৯৭)
🌌 কল্পনার প্রথম মিশন ছিল STS-87, যেখানে তিনি মহাকাশে ৩৭২ ঘণ্টা কাটান এবং পৃথিবীকে ২৫২ বার প্রদক্ষিণ করেন। এই সাফল্য তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয় এবং ভারতীয় নারীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
দ্বিতীয় ও শেষ মহাকাশযাত্রা: STS-107 (২০০৩)
🚀 লঞ্চ: ১৬ জানুয়ারি, ২০০৩
🧪 গবেষণা: ৮০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
👩🚀 ক্রু: ৭ জন, যার মধ্যে কল্পনা চাওলা অন্যতম
মহাকাশে ১৬ দিন গবেষণা চালিয়ে, পৃথিবীতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু মহাকাশযানের উইং-এ লঞ্চের সময় একটি ফোমের টুকরোর আঘাত ছিল অপ্রত্যাশিত বিপদের ইঙ্গিত।
করুণ পরিণতি: ১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩
🌍 ফেরার সময়: সকাল ৮:৫২ (UTC)
🔥 দুর্ঘটনা: তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে স্পেস শাটল বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরিত হয়
নাসার কিছু বিজ্ঞানী আগেই উইং-এর ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করলেও, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তা গুরুত্ব দেননি। কল্পনাদের কিছুই জানানো হয়নি। মুহূর্তের মধ্যেই সাতটি প্রাণ চিরতরে নিভে যায়।
নাসার তদন্ত ও শেষ মুহূর্তের সত্য
তদন্তে জানা যায়, প্রচণ্ড গরম এবং অক্সিজেন ঘাটতির কারণে ক্রুরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন দুর্ঘটনার আগেই।
অর্থাৎ, তারা যন্ত্রণা অনুভব করেননি—যদিও এটি কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দেয়।
কল্পনা চাওলার স্বপ্ন আজও জীবিত
তিনি একবার বলেছিলেন:
"যদি কিছু অর্জন করতে চাও, তাহলে হৃদয় দিয়ে তা চাইতে হবে। মহাকাশ শুধু তাদের জন্য, যারা স্বপ্ন দেখতে জানে।"
আজ তাঁর স্বপ্ন বহু তরুণ-তরুণীকে মহাকাশ বিজ্ঞানের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করছে। তাঁর জীবন আজও প্রমাণ করে—স্বপ্ন বড় হলে, সীমাবদ্ধতা কোন বাধা নয়।
শেষ কথা
🌠 কল্পনা চাওলা নেই, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন আজও বেঁচে আছে।
তিনি প্রমাণ করেছেন—জন্মস্থান নয়, মনস্থিরতাই মানুষের পরিচয়। তাঁর জীবন কেবল বিজ্ঞান নয়, মানবতাবাদেরও এক অনন্য শিক্ষা।
🔔 এই ব্লগটি যদি আপনাকে অনুপ্রাণিত করে, তাহলে শেয়ার করুন, আপনার মতামত জানান এবং ‘Rohosshogroho’ চ্যানেলের পাশে থাকুন।
“জীবন ছোট, তাই স্বপ্নগুলো বড় হওয়া উচিত।” — কল্পনা চাওলা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন