পৃথিবীর ৫টি সবচেয়ে রহস্যময় বই | Codex Gigas, Voynich Manuscript ও আরও



পৃথিবীর ৫টি সবচেয়ে রহস্যময় বই: Codex Gigas থেকে Voynich Manuscript

পৃথিবীতে আমরা বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করি, ইতিহাস জানতে পারি, আর কল্পনার জগতে ডুব দিই। কিন্তু কিছু বই আছে যেগুলোর অস্তিত্বই এক অমীমাংসিত রহস্য। এরা শুধু পঠনের বস্তু নয়, বরং একেকটি যেন ধাঁধার প্যাকেট—যেগুলো ইতিহাসবিদ, ভাষাবিদ ও গবেষকদের শত বছর ধরেও চিন্তায় ডুবিয়ে রেখেছে।

এই ব্লগে আমরা জানবো পৃথিবীর এমন ৫টি অদ্ভুত এবং রহস্যময় বই সম্পর্কে, যেগুলোর জন্ম, ভাষা, উদ্দেশ্য বা লেখক—সবকিছুই ঘন কুয়াশার আড়ালে ঢাকা।

১. Codex Gigas – শয়তানের বাইবেল

Codex Gigas, বা "The Devil's Bible" নামে পরিচিত এই বিশাল গ্রন্থটি ১৩শ শতকে বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রে লেখা হয়। এর ওজন প্রায় ৭৫ কেজি, আর পাতার সংখ্যা ৬২০-এর বেশি। এই বইয়ের সবচেয়ে অদ্ভুত দিক হলো—একটি সম্পূর্ণ পৃষ্ঠায় বিশাল এক শয়তানের চিত্র আঁকা আছে, যা বইটির রহস্যকে আরও গভীর করে তোলে।

প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, একজন সন্ন্যাসীকে মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচতে এক রাতেই এই বই লিখে শেষ করতে হয়। সময় শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে, তিনি শয়তানের সাহায্য নেন—এবং তাই বইটির নাম হয় “শয়তানের বাইবেল”। তবে এটি আসলেই শয়তানের অনুপ্রেরণায় লেখা কিনা, সেটা আজও অজানা।


২. Voynich Manuscript – অজানা ভাষার অদ্ভুত বই

ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় বইগুলোর তালিকায় Voynich Manuscript সবসময়ই প্রথম দিকেই থাকে। ১৯১২ সালে উইলফ্রিড ভয়নিচ নামক একজন প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সংগ্রাহক বইটি আবিষ্কার করেন। বইটি এমন এক ভাষায় লেখা যার অস্তিত্ব পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায়নি, এবং যেটি আজ পর্যন্ত কেউ পুরোপুরি পাঠোদ্ধার করতে পারেনি।

বইটিতে রয়েছে শত শত অদ্ভুত গাছপালা, জ্যোতিষশাস্ত্রের চিত্র, এবং নগ্ন নারীদের রহস্যময় দৃশ্য। কেউ মনে করেন এটি কোন প্রাচীন বিজ্ঞানীর গোপন গবেষণাপত্র, আবার কেউ বলেন এটি শুধুই একটি জটিল ধোঁকা। রহস্য আজও অনন্ত।

৩. Liber Linteus – মমির কাপড়ে লেখা বই

Liber Linteus হলো পৃথিবীর একমাত্র পরিচিত লিনেন (linen) বই, এবং এটি লেখা হয়েছে ইত্রুসকান ভাষায়—যা এখন বিলুপ্ত। আশ্চর্যজনকভাবে, বইটি আবিষ্কৃত হয় একটি মমির কাপড় হিসেবে ব্যবহৃত অবস্থায়! ১৯শ শতকে মিশরে একটি মমির শরীরের উপর মোড়ানো কাপড়টি বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, সেটি একটি সম্পূর্ণ বই!

এই পাণ্ডুলিপিতে মনে করা হয় ধর্মীয় আচার ও উৎসব সম্পর্কিত বর্ণনা আছে। তবে ভাষা বোঝা যায় না বলে এর আসল বার্তা আজও অস্পষ্ট। একটি মৃতদেহকে মোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত বই—এক কথায় অভাবনীয়!


৪. Dead Sea Scrolls – ধর্মীয় ইতিহাসের এক মহা-আবিষ্কার

১৯৪৭ সালে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে একদল গৃহপালক কিশোর ছাগল খুঁজতে গিয়ে গুহার ভিতরে আবিষ্কার করে কিছু পুরাতন কুমোরের পাত্র। সেই পাত্রে ছিল হাজার বছরের পুরনো পাণ্ডুলিপি—যা আজ পরিচিত Dead Sea Scrolls নামে।

এই স্ক্রলগুলো হিব্রু বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মীয় লেখার প্রাচীনতম কপিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এগুলোর মাধ্যমে ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম এবং প্রাচীন ধর্মীয় রীতিনীতির বহু অজানা দিক উঠে এসেছে। আজও প্রত্নতাত্ত্বিকরা এগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন এবং নতুন তথ্য বের করছেন।


৫. Rohonc Codex – এক অদ্ভুত ভাষার রহস্য

Rohonc Codex এক রহস্যময় পাণ্ডুলিপি যেটি হাঙ্গেরিতে আবিষ্কৃত হয়। এর লেখাগুলো এমন এক ভাষায় লেখা যেটি পৃথিবীর কোন পরিচিত ভাষার সাথেই মেলে না। আজ পর্যন্ত কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি বইটি কী ভাষায় লেখা, বা আদৌ কোনো মানে আছে কিনা।

বইটিতে শত শত ধর্মীয় চিত্র, যুদ্ধের দৃশ্য এবং ধর্মীয় প্রতীক রয়েছে, যা দেখে কেউ কেউ মনে করেন এটি খ্রিস্টীয় ধর্মগ্রন্থ হতে পারে। তবে অনেকেই সন্দেহ করেন এটি একটি নিছক প্রতারণা, কিংবা শখের বসে তৈরি করা গোপন কোড। সত্যিটা এখনো অধরা।



উপসংহার

এই পাঁচটি বই শুধু রহস্যময়ই নয়, মানব ইতিহাসের গভীর কৌতূহলের প্রতীক। এদের প্রতিটিই প্রমাণ করে—আমরা যতই আধুনিক হই না কেন, অতীতের কিছু রহস্য আজও আমাদের নাগালের বাইরে। প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব—সবকিছু মিলিয়ে এরা যেন এক অনন্ত ধাঁধা।

আপনি কি কখনও এমন কোনও বই পড়েছেন বা শুনেছেন যা এই বইগুলোর মতোই রহস্যে ঘেরা? নিচে কমেন্টে জানান, আর ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক দিন ও সাবস্ক্রাইব করুন “রহস্যগ্রহ” চ্যানেলটিকে। কারণ, এখানে প্রতিটি ভিডিওতেই আপনি খুঁজে পাবেন নতুন এক রহস্যের দরজা।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন